কৃষিতে সম্ভবনাময় উপজেলা বিজয়নগর। একসময় এ অঞ্চলে কৃষি আবাদ পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে ফল,ফুল ও সবজি চাষে সফলতা এসেছে পরিবর্তন। রসের রাজ্য হিসেবে বিজয়নগর উপজেলা সারাদেশে এখন পরিচিত। ইতিমধ্যে লিচু আর সবুজ মাল্টা বানিজ্যিক ভাবে চাষ হচ্ছে এ অঞ্চলে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় পাহাড়পুর, চম্পকনগর, বিষ্ণুপুর, সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ির আঙ্গিনা ও সমতল ভূমিতে মাল্টা চাষ শুরু হয়। যা ইতিমধ্যে বানিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষের রুপ নিয়েছে । এ বছর ৬৫ হেক্টর জমিতে ৭ শ অধিক ছোট বড় মাল্টা বাগান রয়েছে । মাল্টা বাগান গুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, বাগানের গাছে গাছে সবুজ পাতার আড়ালে ডালে ডালে ঝুলছে সবুজ মাল্টা। সবুজে ঘেরা মাল্টা বাগান দৃষ্টি নন্দন হয়ে আছে। গাছে সবুজ মাল্টার বাম্পার ফলনে পথচারিদের নজর কাড়ছে।
সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের হাটখোলা গ্রামের কৃষক সবুজ ও মোঃ হেবজু ভূঁইয়া জানান, গত ৪ বছর আগে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় মাল্টার ৬০ টি চারা গাছ নিয়ে এক বিঘা জমিতে চাষ শুরু করি। শুরুতে আশানুরূপ ফলন না হলেও এবছর মাল্টার ভালো ফলন পেয়েছি। কোন প্রকার ক্ষতিকর কিটনাশক ছাড়াই এবং বিষ মুক্তগাছে ফলন ভালো হয়েছে। যা সম্পূর্ণরুপে ফরমালিন মুক্ত। ইতিমধ্যে বাগান থেকে পাইকার ও দর্শনার্থীরা এসে সবুজ মাল্টা পাইকারি ও খুচরা ১০০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিংগা গ্রামের কৃষক আলমগীর মিয়া জানান, মাল্টা বাগান করে প্রথম পর্যায়ে ফলন নিয়ে হতাশা থাকলেও বর্তমানে মাল্টা চাষ করে তিনি এখন সফলতা পেয়েছেন। মাল্টা বাগানে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসছে। এখানকার মাল্টা স্থানীয়দের চাহিদা পুরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হচ্ছে। এ অঞ্চলের মাল্টার স্বাদে ভিন্নতা থাকার এ কদর রয়েছে দেশজুড়ে।
কুমিল্লা থেকে বাগানে আসা দুইবন্ধু সজিব ও রাকিব বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাল্টা বাগানের দৃশ্য দেখে আমরা আসছি। এসে খুবই ভালো লাগছে। এখানকার মাল্টা সবুজ। স্বাদে কিছুটা ভিন্ন। বাগান এসে নিজের হাতে মাল্টা পেরেছি। টাটকা ফল পেয়ে আমরার অনেক ভালো লেগেছে।
উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা হাদিউল ইসলাম ভূঞা জানান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহায়তায় মাল্টা চাষে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। যেসকল কৃষক চাষ করতেছেন তাদেরকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সকল প্রকার পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। অল্প খরচে লাভমান হওয়ায় ক্রমাগতভাবেই মাল্টা চাষের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আশা করি একদিন মাল্টা চাষের জন্য বিখ্যাত হবে এ অঞ্চল।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাব্বির আহমেদ জানান, ১০ ইউনিয়নে ৬৫ হেক্টর জমিতে ছোট বড় ৭শ অধিক বাগানে মাল্টার আবাদ হয়েছে । ফলের গুণগত মান এবং সময় উপযোগি পরামর্শ এবং বাজারজাত করণের বিষয়ে কৃষকদেরকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ বছর প্রায় ১০ কোটি টাকা মাল্টার বেচাকেনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।