একজন বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট এবং আমাদের সমাজ
মামুন রণবীর,
বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ডিগ্রী অর্জন করে বড় শহরে বড় চাকরি করতে পারলেই জীবন সার্থক!
এই কনসেপ্টটা এখন বাংলাদেশের সমাজে সুপার এসটাবলিস্টড। এর ব্যতিক্রম কিছু করলে সেটা তেমন গুরুত্ব পায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্র্যাজুয়েট নিজ এলাকায় এসে কৃষি খামার করে নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যদের জন্য কাজের জায়গা তৈরি করে দিচ্ছে, আমাদের সোসাইটি কেন যেন এটা নিতে পারে না। তারা এমন উদ্যোগে বাহবা দেয়া তো দূরের কথা উল্টো তুমুল সমালোচনা জুড়ে দেয়। এবং এতে ফ্রন্ট লাইনে থাকে শিক্ষিতরাই বেশি।
অথচ দিনশেষে উদ্যোক্তা একটা বড় শক্তি। একশ জন উদ্যোক্তা মানে একটা বিশাল দুনিয়া। যেখানে দাঁড়িয়ে আরো বিশাল স্বপ্ন দেখা যায়। কিন্তু আমাদের সমাজ সেই স্বপ্ন দেখতে দিতে চায় না।
পড়াশুনা করেছ,চাকরি করো – এই কনসেপ্ট প্রজন্মের পর প্রজন্মের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। পড়াশুনা করে চাকরিই করতে হবে এটা এখন একটা জাতীয় ট্রেন্ড হয়ে গেছে। আর চাকরি না করলে সোসাইটিতে তেমন ভ্যালুই দেয়া হয় না। ফার্স্টক্লাস পাওয়া একজন বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট চাকরি না করে ব্যবসা শুরু করলে তাকে সবদিক থেকেই তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখা হয়। এমনকি বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজতে গেলেও ম্যাক্সিমাম পাত্রীর ফ্যামিলি জিজ্ঞেস করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে ছেলে কেন চাকরি করে না!!!
এছাড়া নিজ এলাকার মানুষদের জিজ্ঞাসা তো আছেই। এসব উত্তর দিতে দিতে বিরক্তির সীমা চরমে পৌঁছে। তখন একজন তরুণ হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করে। আর সেটার মাত্রা যদি বেশি হয়ে যায় তবে আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটতেও দেখা যায়। যেটার জন্য দায়ী আমাদের সো কল্ড সভ্য সমাজ। যে সমাজ একজন তরুণকে উৎসাহ দেবার বদলে হতাশ করে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে একজন তরুণ সেটাই করবে যেটি তার পছন্দের বিষয়। সেটা হোক চাকরি বা ব্যবসা। হতে পারে সেটি রাজনীতি,সমাজকর্মী বা অন্যকিছু। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী নিয়ে একজন তরুণ নিজ এলাকার প্রাইমারি স্কুল বা হাইস্কুলের শিক্ষক হবে,এটা ম্যাক্সিমামই চিন্তাও করে না। তাদের প্রধান টার্গেট হয় বিসিএস ক্যাডার হওয়া।
একজন বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট বড় শহরে না থেকে নিজ এলাকায় এসে কাজ করলে সেটি সেই এলাকার জন্য অনেক বড় ব্লেসিং হয়ে দাঁড়ায়। কারণ সেই তরুণ বা তরুণী নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করে,নতুন স্টাইলে কাজ করে,নতুন অনেক কিছুই ইমপ্লিমেন্ট করে। নিজ এলাকায় এসে কাজ করলে সেটি আরো একশো জনের জন্য প্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। এভাবে একটা সোসাইটি পরিবর্তনের দিকে যেতে থাকে।
আমাদের সমাজের মধ্যে অনেক নেতিবাচক কিছুর কারণ হচ্ছে এইসব নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট নিজ এলাকায় আসার চিন্তাও করে না, তাদেরকে আসতে দেয়া হয় না। ফলে সে অন্য কোথাও এমন একটা জীবন কাটায় যে জীবন তার শেকড়ের সাথে বিচ্ছিন্ন জীবন। এই বিচ্ছিন্নতা আরো অনেক বিচ্ছিন্নতা তৈরি করে। ফলে সমাজে অনেক গ্যাপ তৈরি হয়। যেটি ফাটল ধরায় সম্পর্কে,যাপিত সময়ে,পারস্পরিক বোঝাপড়ায় এবং আরো অনেক কিছুতেই।
এই গ্লোবাল ভিলেজে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের চিন্তার পরিবর্তন জরুরি। কারণ জীবনের চেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় আর কোথাও নাই। এবং জীবনের জন্যই জীবনের সব আয়োজন।
লেখক # গণমাধ্যমকর্মী